ফরিদুল মোস্তফা খান:

পর্যটক আর কক্সবাজারের মূল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে জেলা পুলিশ। জনবল সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রত কক্সবাজার জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি দীর্ঘসময়ে। জেলা পুলিশ ও পুলিশ হেড কোয়ার্টারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনেক চিঠি চালাচালির পরও সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের অসহযোগিতার কারণে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বর্তমান মঞ্জুরীকৃত জনবলের যে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন ও অর্থমন্ত্রণালয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টাই কেবল পারে পর্যটন শহর কক্সবাজার জেলাবাসির কাঙ্খিত এই স্বপ্ন পূরণ করতে। এজন্য অবশ্যই কক্সবাজারবাসি জরুরিভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায়, সচেতন মহলের আশংকা, অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হবে না। এতে করে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হলে কক্সবাজার জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন, অপরাধ দমন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আধুনিক-মানসম্মত পুলিশি সেবা প্রদান, যথাযথ ট্রাফিক পুলিশিং ব্যবস্থা গ্রহণ, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, ভিভিআইপি ও ভিআইপি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ উপযুক্ত পুলিশি সেবা পাবেনা সাধারণ জনগণ।

সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার জেলায় দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের জনবল সংকট খুবই প্রকট। আমাদের দেশের অন্যান্য স্থানে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১ হাজার ৯শ ৯৫ জন মিলে ১ জন পুলিশ পেলেও মৌসুমে কক্সবাজারে প্রতি ২০ হাজার জনগণের বিপরীতে ১ জন পুলিশ পায় কিনা সন্দেহ রয়েছে। ফলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের মারাত্মক ক্ষতি ছাড়া স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বাড়ছে।

কক্সবাজারের সাবেক পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বলেন, আমি কক্সবাজার থাকাকালে জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বর্তমান মঞ্জুরিকৃত জনবলের অতিরিক্ত বিভিন্ন পদবীর জনবলের পদ সৃষ্টির লক্ষে বর্তমান জনবল এবং প্রস্তাবিত জনবলের অগর্রানোগ্রাম প্রেরণ করেছিলাম। ইন্সপেক্টর জেনারেল বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে মো. আতিকুল ইসলাম, বিপিএম-বার, পিপিএম, এআইজি আরএন্ডএম মহোদয় বিষয়টি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ছিলেন। এরপর বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে আমি জানিনা। কক্সবাজারের বর্তমান পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, ব্যাপক জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় কারণে অত্র জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামো প্রতিনিয়ত বৃদ্দি হচ্ছে। তবু ও আরো অতিরিক্ত পদ সৃজনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের পর্যটনসহ নানা কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল অনুধাবন করে কক্সবাজার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা পর্যায়ের উধর্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কক্সবাজার জেলাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমন ও প্রয়োজনীয় কারণে জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে মঞ্জুরিকৃত জনবলের অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করবেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২৬ জুন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊধর্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সভা করেন। সেখানে উপস্থিত দায়িত্বশীলরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে মঞ্জুরিকৃত জনবলের অতিরিক্ত জনবলের পদ সৃষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব দেন। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর দীর্ঘদিন পরও মন্ত্রণালয়ে তা আটকা পড়ে। জানাগেছে বর্তমানে উক্ত ফাইলটি সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ে আটকে আছে।